বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৩০ অপরাহ্ন

সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় বৃদ্ধা মা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: বাঁশ কাটা কেন্দ্র করে নিহত সন্তানকে হারিয়ে প্রায় পাগল বৃদ্ধা মা নুরজাহান বেগম। আশ পাশের লোক দেখলেই ভয়ে ভাঙা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেও দিচ্ছেন তিনি। যখন কেউ থাকেনা তখন দুহাত তুলে সৃষ্টিকর্তার নিকট সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে কাঁদছেন আর এসপি, ডিসিসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ মে) সকালে বৃদ্ধা নুরজাহান বেগমের বাড়িতে গেলে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি।

এ সময় তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, যতক্ষণ তার সন্তানের মৃত্যু হয়নি ততক্ষণ হত্যাকারীরা মাথায় আঘাতের পর আঘাত করেছেন। হত্যাকারীদের পা ধরে জীবন ভিক্ষা চাইলেও তারা আঘাত করতে ছাড়েনি। তিনি তার সন্তানের হত্যার বিচার চান। সন্তান হারার বেদনা নিয়ে এই পৃথিবীতে আর থাকতে চাই না।

গত গত ২৩ এপ্রিল লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের হরবানিনগর গ্রামের বাঁশকাটাকে কেন্দ্র নিয়ে বৃদ্ধার ছেলে আব্দুর রাজ্জাকের উপর হামলা করে। এতে রাজ্জাক মারা গেলেও বেশ কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হোন।

ওইদিন বৃদ্ধাকে জিম্মী করে হত্যা মামলায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে একটি দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। হত্যা মামলায় মিথ্যে অভিযুক্তদের নাম কেটে নিতে বিভিন্ন দফতরে ঘুরছেন বাদি বৃদ্ধা নুরজাহান বেগম(৬৫)। আর থানার দালাল রবি ও মোখলেছুর পুলিশের দালাল টেনশন শাহিনেরর বিচার চান তিনি।

বাদি বৃদ্ধা নুরজাহান বেগম উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের হরবানিনগর গ্রামের মৃত মতিয়ার রহমানের স্ত্রী।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, পলিথিনের ছাউনি দেয়া নড়বড়ে একটি ছায়লা ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন বৃদ্ধা নুরজাহান বেগম। নড়বড়ে সেই ঘরের উপর প্রতিবেশি মৃত মজিবর রহমানের ছেলে মজনু মিয়ার একটি বাঁশ হেলে পড়ে। বাঁশটি যেকোন সময় বৃদ্ধা নুরজাহানের ক্ষতি করতে পারে। তাই বাঁশ মালিককে একাধিকবার কেটে অপসরন করতে বললেও তারা কেটে নেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে গত ২৩ এপ্রিল বৃদ্ধার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক বাঁশটির হেলে পড়া অংশ কেটে দুর্ঘটনার শ্বঙ্কা মুক্ত করেন। খবর পেয়ে ওই দিন বিকেলে বাঁশ মালিক মজনু মিয়া ও তার পুরো পরিবার অতর্কিত হামলা চালিয়ে বৃদ্ধা নুরজাহানের ছেলে রাজ্জাক, ইব্রাহীম, নাতনী ও ছেলের বউকে রক্তাক্ত জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে কালীগঞ্জ হাসপাতাল ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ৪দিন পর মারা যান আব্দুর রাজ্জাক।

এদিকে সবাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় ২৬ এপ্রিল একটি দালাল চক্রের তিন সদস্য রবি ও মোখলেছুর পুলিশের দালাল টেনশন শাহিন বৃদ্ধা নুরজাহানকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর একটি সাদা কাগজে টিপ সহি নিয়ে ২০ জনের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা (নং-৩৮) দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের কয়েকদিন পরে বৃদ্ধা নুরজাহান জানতে পারেন এ মামলায় ২০জনকে আসামী করা হয়েছে। যার ৭জনকে বৃদ্ধা চিনেন না এবং জানেন না। খবর পেয়ে এ ৭জনের নাম মামলা থেকে বাদ দিতে পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দফতরে নিস্ফল ছুটেছেন। কোন প্রতিকার মেলেনি।

আর হামলা বিষয়ে কিছু না জেনেও হত্যা মামলার আসামী হয়ে অহেতুক বাড়ি ছাড়া ইশোরকোল গ্রামের ৭টি পরিবার। তাদের একজন মেছের আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মৃত রাজ্জাকের মামাত ভাই রবিউল ইসলামদের সাথে মসজিদের কমিটি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। রবিউলদের ছুরির আঘাতে আমার ভাতিজা এক মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছে। কালীগঞ্জ থানার সেই মামলার (নং-৩৪) জেরে আমাদের গ্রামের ৭জনকে হত্যা মামলায় জড়িয়েছে। আমাদের মামলার যারা স্বাক্ষী তাদেরকেও এ হত্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। মুলত হয়রানী করতে তারা এমনটা করেছে। তিনি উচ্চতর তদন্তের দাবি করেন।

মামলার বাদি বৃদ্ধা নুরজাহান বলেন, বাড়ির সবাই রংপুরে চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বাড়িতে একা ছিলেন তিনি। এ সময় আমার ভাতিজা রবি ও মোখলেছুর পুলিশের দালাল টেনশন শাহিনসহ এসে জোর করে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায়। পরে কাগজে টিপ সহি নিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরে জানতে পারি ইশোরকোল গ্রামের নির্দোষ ৭জনকে এ মামলায় আসামী করা হয়েছে। তাই এ ৭জনকে মামলার হয়রানী থেকে বাঁচাতে নিজেও বিভিন্ন দফতরে ঘুরে হয়রান হচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ভাতিজারা তাদের নিজেদের প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শাহীন ওরফে টেনশন শাহীন নামে এক দালালকে দিয়ে এ মামলাটি করিয়েছে।

ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করে এ মামলায় অহেতুক দেয়া ইশোরকোল গ্রামের ৭জনের নাম বাদ দিতে চেয়ারম্যানের বাড়ি বাড়ি গিয়েও কোন কাজ হয়নি বলে দাবি করেন বৃদ্ধা নুরজাহান।

কালীগঞ্জ থানার তদন্ত ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, প্রথম দিকে বিষয়টি জানা ছিল না। পরে জানতে পেয়ে ঘটনাস্থল তদন্ত করেছি। বাদি নিজেও এই ৭জনকে বাদ দিতে বলেছেন। যাহাতে অহেতুক কেউ হয়রানীর স্বীকার না হয় সে দিকে খেয়াল রেখে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে এসপি স্যার দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন বলেও তিনি জানান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com